শিরোনাম
Passenger Voice | ১০:৩০ এএম, ২০২৪-০৩-১৪
দেশের কোনো সড়কে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচলের সরকারি অনুমোদন নেই। তিন চাকার এসব গাড়িতে নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বরও। অথচ সেই থ্রি-হুইলার গাড়িই দেশে অবাধে আমদানি হচ্ছে চীন থেকে। মিথ্যা ঘোষণায় দেশে আসছে এসব গাড়ি। এতে ঘটছে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনাও। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এগুলোর নির্ধারিত মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে শুল্কায়ন করে দিচ্ছে। এমনকি আমদানি করা ১৪ কনটেইনারে প্রায় ১৩ হাজার কেজি পণ্য বেশি পাওয়ার পরও কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো আমদানিকৃত এসব থ্রি-হুইলারের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া তড়িঘড়ি শেষ করা হয়েছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চীন থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ১৪ কনটেইনার থ্রি-হুইলার (ব্যাটারি ছাড়া) আমদানি করে কুমিল্লার ইয়ারা মটরস বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সি-৩২৯১৬৯ বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে পাঁচ সিট এবং তিন সিটের থ্রি-হুইলার নিয়ে আসে। এই কনসাইনমেন্টটি (পণ্যের চালান) নির্ধারিত মূল্যের প্রায় অর্ধেকে শুল্কায়ন হচ্ছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে খালাসের একেবারে শেষ সময়ে কনটেইনারগুলো আটকে (লক) দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এতেই বেরিয়ে আসে শুল্ক ফাঁকির ভয়াবহ চিত্র। শুধু এই কনটেইনারে নয়, গত দেড় বছর ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে এভাবেই পণ্য খালাস হচ্ছে। যার কারণে বিগত দিনে অর্ধশতাধিক পণ্য চালানের ছায়ানথি চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার এক আদেশে থ্রি-হুইলার গাড়ির শুল্কায়ন মূল্য ২৭০ ডলার এবং ৩৯০ ডলার নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এই কমিশনার চলে যাওয়ার পর থেকে এই শুল্কায়ন মূল্য অর্ধেকে নেমে গেছে কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই। যেখানে শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা করতে হলে কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অগোচরেই কর্মকাণ্ডগুলো ঘটছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তনের বিষয়টি আমি জানি না। যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য কীভাবে জরিমানা ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থ্রি-হুইলারের বিষয়টি নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার অবজারভেশন রয়েছে। তবে এই কনসাইনমেন্টে মিথ্যা ঘোষণা হবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, থ্রি-হুইলার ইউনিট হিসেবে শুল্কায়ন হচ্ছে। তাই বেশি পণ্য হলেও জরিমানা হবে না।
শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির তথ্য থাকায় শেষ মুহূর্তে পণ্য চালানটির খালাস স্থগিত করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। এতে আমদানিকারকের ঘোষণার বাইরে পাঁচ সিটের থ্রি-হুইলারে ৫ হাজার ৪৫৫ কোজি, তিন সিটের থ্রি হুইলারে ৩ হাজার ২৪৩ কেজি এবং ৫২০ ইউনিট থ্রি হুইলারের বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার ৩৯১ কেজি পণ্য বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই চালানের ১৪ কনটেইনারে প্রায় ১৩ হাজার ৮৯ টন বেশি পণ্য বেশি পাওয়া গেছে, যা মোট পণ্যে প্রায় ৭ শতাংশ। আর ঘোষিত ওজনের তুলনায় বেশি পণ্য আসার কারণে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ আনার পরামর্শ দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। এতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শুল্কায়ন মূল্যের বিষয়টি অনিয়ম হয়েছে মানলেও মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। একই বক্তব্য আমদানিকারকের।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রুপের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাহিদুন্নবী বলেন, এই পণ্য চালানগুলো ইউনিট হিসেবে শুল্কায়ন হওয়ার কারণে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ আনা যাবে না। আর কেজি বেশি হওয়া এই শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার বিষয় নয়। তবে বিষয়টি সাব-জুডিশ (বিচারাধীন) হওয়ায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি নন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এই কর্মকর্তা।
থ্রি-হুইলার আমদানিতে কোনো ধরনের মিথ্যা ঘোষণা হয়নি বলে আবেদন করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইয়ারা মটরস বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সব প্রক্রিয়া শেষ করেই পণ্য চালান খালাসের অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আর ঘোষণার বাইরে আনা ৩২০টি চাকা স্পেয়ার (বাড়তি) হিসেবে এসেছে। তবে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ এই চাকার মূল্য পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে ইয়ারা মটরস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মানির উদ্দিন বলেন, থ্রি-হুইলারের এই কনসাইনমেন্টে নেট ওজন এবং গ্রস ওজনের মধ্যে কিছু ব্যবধান রয়েছে। যেহেতু এসব থ্রি-হুইলার ইউনিট হিসেবে শুল্কায়ন হয়, তাই ১৩ হাজার কেজি বেশি হলেও এটা মিথ্যা ঘোষণা হবে না। আর কম মূল্যে শুল্কায়নের বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বিষয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কত দামে শুল্কায়ন করবে, তা তারা নির্ধারণ করবে। আর নিয়ম মেনেই শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সূত্র: কালবেলা
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.